পটুয়াখালীর
কলাপাড়া উপজেলার ৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ১৮টির ভবন জরাজীর্ণ হয়ে
পড়েছে। কিন্তু এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে গ্রামের মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া
হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর
(এইচইডি) সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে এসব ক্লিনিকের পাকা
ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। দ্রুত জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় এসব ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও
দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এ সম্পর্কে এইচইডির উপজেলা কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো.
মাসুদুল আলম বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনের তালিকা হাতে
পেয়েছি। ডিসেম্বরে এসব ভবন সরেজমিনে দেখার জন্য মাঠপর্যায়ে যাব। এরপর
প্রাক্কলন তৈরি করে পরবর্তী কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।’
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নে চারটি,
চাকামইয়া ইউনিয়নে একটি, লালুয়া ইউনিয়নে একটি, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নে একটি,
বালিয়াতলী ইউনিয়নে একটি, মহিপুর ইউনিয়নে দুটি, ধানখালী ইউনিয়নে তিনটি,
ধুলাসার ইউনিয়নে একটি, নীলগঞ্জ ইউনিয়নে দুটি, চম্পাপুর ইউনিয়নে একটি,
লতাচাপলী ইউনিয়নে একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের অবস্থা নাজুক।
চম্পাপুর ইউনিয়নের পাটুয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা
যায়, ভবনের দেয়াল ফেটে ভাগ হয়ে গেছে। মেঝে দেবে গেছে। ছাদের পলেস্তারা খসে
পড়ছে। বের হয়ে গেছে রড। ছাদের কার্নিশ বরাবর চারদিকে ফাটল ধরেছে। দরজা,
জানালা ভেঙে পড়েছে। রোগীদের বসার জায়গা নেই। এখানে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ
ক্লিনিক প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মুসরাত জাহান বলেন, মাঝেমধ্যে ছাদের
পলেস্তারা খসে পড়ে। যেকোনো সময় বড় রকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সব সময় আতঙ্ক
নিয়েই কাজ করতে হয়। বর্ষাকালে টানা বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ত। তখন পাশের
বিদ্যালয়ের বারান্দায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হতো।
লতাচাপলী ইউনিয়নের কচ্ছপখালী গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকের
সিএইচসিপি মাহমুদা ইয়াসমিন বলেন, ‘সব আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক কষ্ট
করে কাজ করছি। ভবনের অবস্থা খারাপ হওয়ায় সন্তান প্রসব করার কাজ বন্ধ রাখা
হয়েছে।’
বালিয়াতলী ইউনিয়নের তুলাতলী কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি
জুলিয়া নাসরিন বলেন, এই ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার ছাড়া ৯৭৫ জনের সন্তান প্রসব
হয়েছে। বরিশাল বিভাগের মধ্যে ক্লিনিকটি অন্যতম সেরা। অথচ এখানকার ভবনের
দরজা-জানালা ভেঙে পড়ে আছে। টয়লেটের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। চারপাশের
দেয়ালে ফাটল ধরেছে। উপজেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় এই দুরবস্থার কথা উপস্থাপন
করা হয়েছে। অথচ কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
বাকি ১৫টি ক্লিনিক ভবনের অবস্থাও একই রকমের। এসব ক্লিনিকের
চেয়ার-টেবিল, বাচ্চা প্রসব করানোর টেবিল, রোগীর খাট-বিছানা নষ্ট হয়ে গেছে।
কোনো কোনো ক্লিনিকের চেয়ার-টেবিল পর্যন্ত নেই। গ্রামের বাসিন্দারা নিজ
উদ্যোগে চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বেশ কয়েকটি ক্লিনিকে টয়লেটের
সঙ্গে সেপটিক ট্যাংকের সংযোগ নেই। যার ফলে মল-মূত্র বাইরে পড়ে দুর্গন্ধ
ছড়াচ্ছে।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আবদুর রব
বলেন, ‘আমাদের এলাকার ক্লিনিকের ভবনটিতে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার মতো নেই। ভবনটি
ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকেন রোগীসহ সাধারণ মানুষ এবং ক্লিনিকের
কর্মীরা।’
ধুলাসার ইউনিয়নের অনন্তপাড়া গ্রামের হাসিনা বেগম বলেন,
ক্লিনিকের জরাজীর্ণ ভবনের কারণে প্রসূতিরা ওই সব ক্লিনিকে যেতে সাহস পান
না। ফলে সেবা কার্যক্রম বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
Copied from Daily Prothom Alo
0 comments:
Post a Comment