শিরোনাম
Loading...
Thursday, February 22

Info Post


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি National Advisory Committee (NAC) সভায় বেসরকারি উৎস হতে অর্থ সংগ্রহ ও তা কমিউনিটি ক্লিনিক এর টেকসই উন্নয়নে, জরুরী প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য একটি তহবিল অর্থাৎ ট্রাষ্ট ফান্ড গঠনের দিকনির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে ২২ অগাস্ট ২০১৫ ইং তারিখে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০১৪ সালের জাতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি ক্লিনিক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবারও কমিউনিটি ক্লিনিক কে আর্থিক সহযোগিতার জন্য একটি সহায়তা ফান্ড গঠনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন "টাকার অভাবে এই ক্লিনিক কক্ষনও যেন বন্ধ হয়ে না যায় সে ব্যবস্থা আমি করে যাব" । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হতে সেদিন যে লিখিত ভাষণের কপি সবাইকে সরবরাহ করা হয়েছিলো তাতেও এমনটিই লেখা ছিল। বেসরকারি বিভিন্ন উৎসের কথায়ও তিনি উল্লেখ করেন। বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তিকে তিনি গরিব মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় অনুদান দেবার আহ্বান জানান।

এর ঠিক কয়েক দিন পরেই আমরা " কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সেবা ট্রাষ্ট আইন-২০১৫" এর খসড়া হাতে পেলাম। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ওয়েব সাইট এ এই খসড়া আইনের উপর মতামত চাওয়া হয়েছে। কিসের সাথে কি, পান্তা ভাতে ঘি!! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললেন " কমিউনিটি ক্লিনিক সহায়তা ফান্ড (ট্রাষ্ট)" সেখানে হল "কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সেবা ট্রাষ্ট"। যেখানে আমরা সবাই দেখছি কমিউনিটি ক্লিনিক আজ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এটি কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে। প্রস্তাবিত " কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সেবা ট্রাষ্ট আইন-২০১৫" এ উদ্দেশ্য প্রচ্ছন্ন রেখে, অপারাপর আইনগুলোর মতোই বিভিন্ন ধারা উপধারায় বর্ণনা এবং সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।এ আইনের উদ্দেশ্য কক্ষনই কমিউনিটি ক্লিনিক কে সহায়তা কিংবা ফান্ড গঠন বা জোরদার করা নয়, কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রন করা। কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা করা এই আইনের উদ্দেশ্য নয় এজন্য বলছি যে, প্রস্তাবিত এই আইনের কোথাও কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম এবং এর সেবা ব্যবস্থাপনা কিভাবে পরিচালিত হবে তাঁর একটি বর্ণ ও নেই। আছে ট্রাষ্ট বোর্ডে কারা থাকবে, ট্রাষ্ট পরিচালনার জন্য কারা থাকবে তাঁর ধারাক্রম, তাদের দায় দায়িত্বের নামে ক্ষমতার পরিধি কি হবে তার বর্ণনা। শত শত একর জমি, হাজার হাজার অবকাঠামো এক নিমিষেই ট্রাষ্টের। বাহ কি চমৎকার!! সবচেয়ে ভয়ংকর হল ২২ এর ঘ ধারা, যাতে উল্লেখ আছে ট্রাষ্ট নামের এই ক্লীব পদার্থের থাকবে কার্যক্রমের হাজার হাজার কর্মী কে পুনঃ নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা। বাংলাদেশে নিয়োগ যে কি জিনিষ তা সকলেই জানে !! আইনে এই ধারা দেখে মনে হয়েছে, এটিই মনে হয় আসল উদ্দেশ্য।

যাহোক, অনেক তর্ক বিতর্কের পর মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী মহোদয় এই আইন আপাতত হিম ঘরে রাখতে বলেন। স্বস্তি আসে সংশ্লিষ্ট সকলের মনে। প্রস্তাবিত ট্রাষ্ট আইন বাতিল এবং চাকুরী রাজস্ব করনের আন্দোলন শুরু করে এর হাজার হাজার কর্মী। আবার সেই ট্রাষ্ট আইন প্রনয়নের কাজ শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছে, কমিউনিটি ক্লিনিক এর জন্য একটি ট্রাষ্ট গঠনের কথা নাকি প্রকল্প অফিস থেকেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলা হয়েছিলো। আমি বলি, যদি তাই হয় সেটাও বলা হয়েছিলো ঐই একিই কারনে আর তা হল, এর উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উৎস হতে যে অর্থ বা সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে তাঁর সমন্বয় এবং তাঁর সুষ্ঠু ব্যবহার। কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার জন্য আজ কমিউনিটি গ্রুপ তহবিল গঠন করেছে, বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান দান অনুদান দিচ্ছে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ কমিউনিটি ক্লিনিক এর উন্নয়নে নানামুখি সাহায্য সহযোগিতা করছে। এমনি করে হয়ত আন্তর্জাতিক দাতা, বহুজাতিক কোম্পানি তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ, দেশীয় শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কমিউনিটি ক্লিনিক এর উন্নয়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে।

কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিক, এর স্থাবর- অস্থাবর সম্পত্তি, এর সমস্ত জনবল ট্রাষ্ট এর অধীনে চলে যাবে, ট্রাষ্ট এর অধীনে এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে এটা কোন অবস্থাতেই বাস্তবসম্মত নয়। অনেক বিখ্যাত ট্রাষ্টের অনেক সম্পদ, ফ্যাক্টরি, দোকানপাট, পরিবহন ছিল, আজ তাঁর সবই ইতিহাস। প্রস্তাবিত ট্রাষ্টের যে কলেবর তাতে এই রথি মহারথিদের ভরণ পোষণ, সন্মানি, সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি মেটাতেই কমিউনিটি ক্লিনিক ফান্ড শুন্য হবে এ ভাবনা অমুলক নয়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত একটি মূলধারার কার্যক্রমকে ট্রাষ্টের মতো একটি বিচ্ছিন্ন সত্তার হাতে কেন যাবে তা সত্যি আমাদের বোধগম্য নয়। কমিউনিটি ক্লিনিক আজ শুধু একটি কার্যক্রম নয় এটি একটি সামাজিক আন্দোলন। হাজার হাজার সাধারন কৃষক তাদের জমি দিয়েছেন, হাজার হাজার কর্মী ও তাদের পরিবার, ১০ লক্ষাধিক কমিউনিটি গ্রুপ ও সাপোর্ট গ্রুপ সদস্য, ৬৫ হাজার স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি সর্বোপরি দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত গ্রামীণ জনগোষ্ঠী যারা সরাসরি এর সুফল পাচ্ছে, সবাই এই কার্যক্রমের অংশ। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশি- বিদেশি এনজিও এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের সাথে যুক্ত। সবচাইতে বড় বিষয় হচ্ছে, স্বাস্থ্য। পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি সেবা সমন্বিত ভাবে প্রদানের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক একেবারে মানুষের দোরগোড়ায় একটি ইউনিক প্রতিষ্ঠান।

একটি কথা আমরা সবাই স্বীকার করি যে, উপাজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকগণ কমিউনিটি ক্লিনিক গুলিকে দেখভাল করেন। ২০১১ সাল হতে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প সরকারের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সেক্টর কর্মসূচির ( HPNSDP) মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে থাকে। ২০১৫ সালে প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ার পর HPNSDP এর একটি অপারেশন প্লান Community Based Health Care (CBHC) তে প্রকল্পের সমস্ত জনবল স্থানান্তরিত হয়। এই অপারেশন প্লানের মেয়াদ ২০১৬ সালের জুন। হয়ত আর ৬ মাস বাড়তে পারে। শুনছি ট্রাস্টিই এই প্রকল্পের শেষ পরিনতি। পরবর্তী সেক্টর কর্মসূচিতে নাকি CBHC আর থাকবে না, থাকবে না SDG কিংবা Universal Health Coverage এর কোন কর্মসূচিতেও। আলাদা একটি ট্রাষ্ট হয়ে এর জনবল সহ পুরো কার্যক্রমটি একটি ঠুঁটো জগন্নাথ এ পরিনত হবে। ট্রাষ্ট এর কাজে স্বাস্থ্য প্রশাসনের কেউ সহযোগিতা করবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। সে লক্ষণ ইতিমধ্যে প্রকাশ পাচ্ছে। শুনে অবাক হবেন, Mainstreaming Community Clinic in Upazila Health System নামে একটি কার্যক্রম এবং প্রোগ্রাম ম্যনেজার ছিল এই অপারেশন প্লান এ, যা আজ বিলুপ্ত।

হতাশা আর ক্ষোভ মাঠ পর্যায়ে এই কার্যক্রমকে অনেকটা দূর্বল করে দিয়েছে। প্রকল্প বলে এমনি, দূর দূর ছাই ছাই, আর ট্রাষ্ট হলে তো কথাই নাই। এটা হল প্রচলিত সরকারি চাকুরে মানসিকতা, সে অন্য কাউকে স্থায়ী দেখতে চায় না, এই যেমন ধরেন কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প অফিসে যারা ৪র্থ শ্রেণীর সরকারি করমচারি, যারা কিনা deputation এ এসেছে তারা পর্যন্ত প্রকল্প কর্মকর্তাদের কোন দাম দেয় না।তারাও চায়না আমরা স্থায়ী হই। একজন উপজেলার সুইপার হয়ত CHCP কে দেখে বলে যা বেটা তোরা তো আজ আছিস কাল নেই। দান বাক্সে দিলে পাবি, না দিলে না পাবি। এই যখন প্রকল্পের অবস্থা তখন ট্রাষ্ট হলে কি হবে তা শিশুকেও বলে দিতে হয় না। বিএনপি-জামাত জোট সরকার একদিন এই ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছিল। এই সরকার তা পুনরুজ্জীবিত করেছে। মানুষ বলে বিএনপি আসলে আবার বন্ধ করে দিবে। একদিন হয়ত মানুষ বলবে শেখের বেটী করছিল ছাগলে খাইছে!!

এটি বাচিয়ে রাখার নামে এমন একটি ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা দেখে কেবল হাল্লা রাজার ক্থাই মনে হচ্ছে। আমার এবং আমাদের বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কখনই এমনটি চান না এবং তিনি তা হতে দিবেন না। আমরা ট্রাষ্ট চাই। অবশ্যই চাই, তবে তা হচ্ছে, কমিউনিটি ক্লিনিক সহায়তা ট্রাষ্ট, যেখান থেকে জরুরী প্রয়োজনে কমিউনিটি ক্লিনিক কে সহযোগিতা প্রদান করা হবে। প্রস্তাবিত ট্রাষ্ট কখনোই এই কার্যক্রমকে বাচিয়ে রাখতে পারবে না, নতুন আইন করে কেউ আবার এই আইন বাতিল করে দিতে পারে। একমাত্র, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূলধারায় সম্পৃক্ত করার মাধ্যমেই কমিউনিটি ক্লিনিক টিকিয়ে রাখা ।।


M Samim Reza
Training Officer
Community Based Health Care (CBHC)

1 comments: