অটিজম হচ্ছে কিছু সমষ্টিগত গুরুতর বিকাশজনিত সমস্যা, যাকে অটিজম স্পেকট্রাম সিনড্রোম (ASD-Autism Spectrum Syndrome) বলা হয় - যা শিশুকালের শরেতে দেখা যায় এবং তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জন্মের ৩ বছরের মধ্যে প্রকাশ পায়।
যদিও
লক্ষণ এবং মাত্রার ভিন্নতা আছে কিন্তু অটিজমের ক্ষেত্রে একটি বিষয় সকলের বেলায়ই বিরাজমান
সেটি হচ্ছে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ এবং প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার সমস্যা।
যদিও
অটিজম সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না তথাপি সঠিক এবং সময়ানুগ চিচিৎসা এই সকল শিশুদের জীবনে
আশানুরুপ পরিবর্তন আনতে পারে।
অটিজমের কারণ
অটিজমের
একক কারণ এখনো জানা যায়নি তবে জিন জনিত সমস্যা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা অটিজমের কারণ
কিনা এ বিষয়ে ব্যপক গবেষণা চলছে।
অটিজম কাদের হয়
যে
কোনো শিশুর অটিজম হতে পারে। মেয়ে শিশুদের তুলনায়
ছেলে শিশুদের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা প্রায় ৪ গুন বেশি। সাধারণত শিশুর বয়স ৩ বছর হাবার
আগেই (অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১৮ মাস থেকে ৩৮ মাস বয়সের মধ্যেই) অটিজমের লক্ষণ গুলো প্রকাশ
পায়। বাবা মায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা বা শিশুর প্রতি বাবা-মায়ের ব্যবহার এসবের সাথে শিশুর
অটিজম হবার কোনা সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। তাই শিশুর অটিজম থাকলে কোনোভাবেই বাবা-মায়েরা
যে নিজেদের দায়ী না করেন বা নিজেদের অপরাধী মনে না করেন।
বাংলাদেশে অটিজমের হার
বিশ্বে
প্রতি ১১০ জনে ১ জন শিশু এ সমস্যায় ভুগছে। বাংলাদেশের শিশুদের মধ্যে অটিজমের হার প্রায়
০.৮ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি ১ হাজারে ৮ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আমেরিকান সাইকিয়াটিক
এসোসিয়েশনের বিভিন্ন রোগ সনাক্তরণের পদ্ধতিতে অটিজমকে একটি ব্যাপক বিকাশজনিত সমস্যা হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে।
অটিজমের লক্ষণসমূহ
অটিস্টিক
শিশুদের বিকাশে ৩টি গুরুত্বপূর্ জায়গা/ ক্ষেত্রে সমাস্যার সৃষ্টি হয়
১.
সামাজিক
২.
ভাষাগত ও
৩.
আচরণগত।
এই
লক্ষণগুলি একেক জনের বেলায় এককেভাবে প্রকাশ পায়। ২টি অটিস্টিক শিশুর বেলায় লক্ষণের
ব্যপক হেরফের হতে পারে। অনেকের খুব অল্প বয়সে লক্ষণ দেখা দেয়। আবার কউ কউ প্রথম কয়েক
মাস বা বছর স্বাভাবিক বিকাশ লাভ করে, তারপর হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয় , গুটিয়ে যায় বা ভাষাজ্ঞান
হারিয়ে ফেলে, যা আগে অর্জন করেছিল।
অটিস্টিকদের
কিছু উল্লেখযোগ্য লক্ষণ নিম্নে দেওয়া হলো-
১. সামাজিক
- নাম ধরে ঢাকলে সাড়া য়ে না।
- চোখে চোখ রাখে না বা কম রাখে
- মাঝে মাঝে কথা শুনোন বলে মনে হয়
২. ভাষাগত
- ২ বছরেরও পরে কথা বলা শুরু করে
- অতীতে শেখা শব্দ বা কথা ভুলে যায়
- অনুরোধ করার সময় চোখে চোখ রাখে না
- অস্বাভাবিক স্বর বা আওয়াজে কথা বলে
- কোন ক্ষেত্রে শিশুটি স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে হয়ত পারে কিন্তু একটি বাক্য শুরু করতে তার অস্বাভাবিক রকম দেরি হয় অথবা কথাবার্তা চালিয়ে যেতে পারে না
- কখনো বা দেখা যায় একই শব্দ বার বার করে সে উচ্চারণ করে যাচ্ছে। ৩ বছরের কম বয়সী শিশুরা তা বয়সের উপযোগী নান রকম খেলা স্বতঃস্ফুর্তভাবে নিজেরাই তৈরি করে খেলে- কিন্তু অটিজম আছে এমন শিশুরা এ রকমটি করে না
৩. আচরণগত
- একই আচরণ বারবার সে করতে থাকে, যেমন-হাত নাড়ানো, হাত দেখা, একইভাবে ঘোরা, বিভিন্ন জিনিস সারিবদ্ধভাবে সাজানো
- অতিরিক্ত শব্দ, আলো স্পর্শ, গন্ধ, স্বাদ ও নড়াচড়া ইত্যাদির প্রতি কম বা বেশি মাত্রায় প্রতিক্রিয়া দেখায়
- তারা নিজস্ব রুটিন মেনে চলতে ভালবাসে। দৈনন্দিন কোন রুটিনের হেরফের হলে তারা অস্থির হয়ে যায়।
- কোন কারণ ছাড়াই এরা হঠাৎ রেগে উঠে, হাসে, কাঁদে বা ভয় পায়। অনেক সময় নিজের শরীরে বা অপরকে কামড় দেয় বা আঘাত করে।
অটিজম কারা নির্ণয় করবে
কোনো
শিশুর মধ্যে অটিজমের কিছু লক্ষণ থাকলেই তার অটিজম আছে এমন সিদ্বান্ত দ্রুত নেওয়া যাবে
না। কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকিই বলতে পারবেন শিশুটির অটিজম আছে কিনা।
- শিশু বিশেষজ্ঞ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ, কিংবা অটিজম এ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকই অটিজম নির্নয় করবেন। তাই এ ধরণের চিকিৎসকের মতামত পাবার আগে কোনো শিশুর অটিজম আছে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
- তবে নিকটবর্তী অঞ্চলে বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকলে নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স/জেলা সদর হাসপাতালে যোগাযোগ করবেন।
- মনে রাখতে হবে অটিজম নির্ণয়ের জন্য সুস্পষ্ট কোনো পরীক্ষা আবিস্কৃত হয়নি- এটি নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাই যথেষ্ট।
- তবে অটিজম বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরণের মনোবৈজ্ঞানিক পরিমাপক এর সাহায্যে অটিজম সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে।
মনে
রাখবেন, কোনো বই পড়ে, পত্রিকার স্বাস্থ্য পাতা পড়ে নিজে নিজে কোনো শিশুর অটিজম নির্ণয়
করা যাবে না।
অটিজম সম্পর্কে আরও পড়ুন
0 comments:
Post a Comment