মাইগ্রেইন রোগী |
মাইগ্রেইন
হলে তীব্র মাথা ব্যথা হয় যা সাধারণত মাথার একদিকে অথবা পিছনের দিকে অনুভূত হয়, তবে
অনেক সময় চোখের চারপাশেও ব্যথা থাকতে পারে। এর সাথে প্রায় সময়ই বমি বমি ভাব থাকে,
কোনো কোনো সময় চোখেও সবকিছু ঝাপসা দেখা যায়। মাইগ্রেইন চক্রাকারে হতে থাকে অর্থাৎ
একবার আসে আবার ভালো হয়ে যায় তারপর আবার আসে এবং এভাবে চলতেই থাকে। অনেক সময় মাইগ্রেইনের রোগীদের বিষন্নতা
থাকে, এবং সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে তাদের সমস্যা হতে
পারে।
বয়োঃসন্ধিতে প্রথম মাইগ্রেইন হতে দেখা
যায় এবং তা বার্ধক্য হবার আগ পর্যন্ত চলতে পারে।অনেক সময় জন্মনিয়ন্ত্রনের বড়ি বা
বিশেষ কোনো খাবার খেলে মাইগ্রেইন শুরু হয়, এগুলো মাইগ্রেইন এর প্রেসিপিটেটিং ফ্যাক্টর
(Precipitating factor) নামে পরিচিত।
নিউরোলজিস্ট
(Neurologist) এর তত্ত্বাবধানে মাইগ্রেইন এর চিকিৎসা করানো উচিত। মাইগ্রেইন হলে প্যারাসিটামল
জাতীয় অসুধ খেলে মাথা ব্যথা কমতে পারে। মাইগ্রেইন রোগীর উত্তেজনা নিয়ন্ত্রন করতে
হবে সেই সাথে প্রেসিপিটেটিং ফ্যাক্টর পরিহার করতে হবে। ব্যথা খুব বেশী হলে নিউরোলজিস্টগণ
প্রপানলল, এমিট্রিপ্টাইলিন, মেথিসারজাইড ইত্যাদি অসুধ ব্যবহার করে থাকেন। মাইগ্রেইনের সমস্যার ওষুধ থাকলেও জীবন যাপনের ধরণ এবং খ্যাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
করেও আপনি এই সমস্যা কমিয়ে আনতে পারেন।
কোন ধরণের খাবার খেলে ব্যথা শুরু হয় তা
বের করুন
একেক জনের একেক ধরণের খাবারের কারণে মাইগ্রেইনের
ব্যথা শুরু হয়। আপনার যাতে ব্যথা শুরু হয় তাতে আরেকজন মাইগ্রেইন রোগীর সমস্যা নাও হতে
পারে। কয়েক সপ্তাহ একটি নোটবুকে কি কি খাবার খাচ্ছেন এবং কোন কোন দিন ব্যথাহচ্ছে তা
টুকে রাখুন। আপনি এভাবে কোন খাবারের কারণে মাইগ্রেইনের ব্যথা শুরু হয় তা বিশ্লেষণ করে
বের করতে পারবেন। এটি একটি ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া মনে হলেও অনেকে এতে উপকার পেয়েছেন।
মাইগ্রেইনের ব্যথা শুরু করে এমন খাবারগুলো এড়িয়ে চললে, সময়মত ঘুমালে এবং ভারসাম্যপূর্ণ
জীবন যাপন করলে মাইগ্রেই থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খাবার তালিকায় রোজ সবুজ শাক সবজি এবং বাদাম
রাখুন
ম্যাগনেসিয়াম ও রিবোফ্লাবিন বা ভিটামিন-বি২
মাথা ব্যথা কমানোর কাজ করে। এগুলো সবুজ শাক সবজি এবং বাদামে পাওয়া যায়। তাই রোজ দুপুরে
বা রাতে শাক খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন ৪-৬ টি বাদাম খাওয়ার চেষ্টা করুন। আলু এবং
লাল আটাতেও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। ডিম এবং কম চর্বিযুক্ত দুধে রিবোফ্লাবিন থাকে।
ভিটামিন ডি-এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিন
ভিটামিন ডি মূলত: দাঁত এবং হাড়ের সুস্থতার
জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হলেও মাথা বথ্যার সাথেও এটির সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা
হয়। সাধারণত: প্রতিদিন ১০০০ আইইউ ভিটামিন ডি শরীরের জন্য প্রয়োজন হলেও মেয়েদের ঋতুচক্র
বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এই চাহিদা ১২০০ আইইউ-তে গিয়ে পৌছায়। ভিটামিন ডি-এর বেশিরভাগই আসে
সূর্যের আলোর সংস্পর্শ থেকে তবে খাবার থেকেও অনেকটুকু শরীরে গ্রহণ করতে হয়। যেসব খাবারে
ভিটামিন ডি রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- মাশরুম, ডিমের কুসুম, চিজ বা পনির, দই, দুধ, কড লিভার
অয়েল এবং গরুর কলিজা। আপনি একসাথে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর সাপ্লিমেন্ট
খেয়েও দেখতে পারেন। এটি বিশেষ করে ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এবং ষাটোর্ধ যে কারোর
জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
পরিমান মত নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করুন
প্রতিদিন তিনবার ভরপেট খাওয়ার চাইতে অল্প
করে বেশ কয়েক বার খান যাতে রক্তচাপ কখনো কমে না যায়। চর্বিযুক্ত খাবার কম খান এবং জটিল
ধরণের শর্করাজাতীয় খাবার বেশি খান। যেসব খাবার থেকে আস্তে আস্তে চিনি শরীরে পৌছায়,
যেমন-বাদামি রুটি, লাল আটার রুটি, ওটমিল, লাল চাল, কম জিআই যুক্ত চাল, শাক সবজি সেগুলোকে
জটিল ধরণের শর্করা জাতীয় খাবার বলে। আপনার মাইগ্রেইন হয়ত কখনই পুরোপুরি ভাল হবে না,
তবে কিছু বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের কারণে জীবনের মান অনেক উন্নত হয়ে উঠতে পারে।
0 comments:
Post a Comment